মাতৃভাষা
– ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
কবি ঈশ্বর গুপ্ত ছিলেন গ্রাম বাংলার কবি l কবিগানের সূত্রে তিনি গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে গেছেন l গ্রাম বাঙলার জীবন যাপন, তার শৈলী, তার সংস্কৃতি তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন l তার কবিতায় তাই উঠে এসেছে গ্রাম-বাংলার হৃৎস্পন্দন l
"মাতৃভাষা" শীর্ষক কবিতাটিতে শিশু কিভাবে মায়ের কোলে তার জীবনের প্রথম ভাষার শিক্ষা পায় তার কাব্যিক এবং বিজ্ঞানসম্মত বর্ননা আছে l সব উন্নত ভাষারই একটা মান্য রূপ যা লেখাপড়ার কাজে ব্যবহৃত হয়, এবং একটি কথ্য রূপ, যা কথা বলার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় – এমন দুটি রূপ আছে l শিশু মায়ের কোলে মাতৃভাষা হিসাবে ভাষার কথ্য রূপটিই শেখে l যেমন যেমন শিশুর বাক্ যন্ত্র উন্নত হতে থাকে, প্রথমে অর্থহীন কিছু শব্দ, তারপর আধো আধো শব্দ, তারপর শব্দের শুদ্ধরূপ, পরবর্তীতে শব্দগুচ্ছ এবং আরও পরে তার মনের ভাব পুরো বাক্যে বলতে শেখে l শিশুর ভাষাশিক্ষার প্রতি অগ্রগতিতে মা-বাবা ও অন্য পরিজনরা স্বর্গীয় সুখ অবলম্বন করেন l এই বিষয়টি কবি ঈশ্বর গুপ্ত তাঁর "মাতৃভাষা" শীর্ষক কবিতায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন l
ভাষা শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর অন্য শিক্ষাও চলে, "বস্তুবোধ" হয়, হিতাহিত জ্ঞান হয় l বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার নানা পরিবর্তিত প্রয়োজনে ভাষাকে সে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করে l এই সকল জ্ঞান, বুদ্ধি সবই কিন্তু ভাষার মাধ্যমেই তার কাছে ধরা দেয় l সুতরাং, কবির মতে, মাতৃভাষার কাছে আমাদের ঋণের শেষ নেই l যে ভাষা আমাদের মনের সকল আশা পূরণ করে, তার সেবায়, উত্তরোত্তর তার সমৃদ্ধির জন্য আমাদের সচেষ্ট থাকা উচিত l
আধুনিক যুগের প্রথম দিকের ভাষা হলেও কবিতাটি সহজবোধ্য, অপূর্ব ছন্দময়, এবং শিশু ভাষাশিক্ষার ক্ষেত্রে যে স্তরগুলোর মধ্যে দিয়ে যায় তার নিখুঁত পর্যবেক্ষণের নিদর্শন কবি কবিতাটির মধ্যে রেখেছেন l