অনামিকা
– কাজী নজরুল ইসলাম
কোন্ নামে হায় ডাকব তোমায়
নাম -না-জানা- অনামিকা।
জলে স্থলে গগন-তলে
তোমার মধুর নাম যে লিখা ।।
গ্রীষ্মে কনকচাঁপার ফুলে
তোমার নামের আভাস দুলে
ছড়িয়ে আছে বকুল মূলে
তোমার নাম হে নিকা ।
বর্ষা বলে অশ্রুজলের মানিনী সে বিরহিনী।
আকাশ বলে,তড়িত লতা, ধরিত্রী কয় চাতকিনী!
আষাঢ় মেঘে রাখলো ঢাকি
নাম যে তোমার কাজল আঁখি
শ্রাবণ বলে, যুঁই বেলা কি?
কেকা বলে মালবিকা।।
শারদ-প্রাতে কমলবনে তোমার নামে মধু পিয়ে
বাণীদেবীর বীণার সুরে ভ্রমর বেড়ায় গুনগুনিয়ে।
তোমার নামের মিল মিলিয়ে
ঝিল ওঠে গো ঝিলমিলিয়ে
আশ্বিন কয়, তার যে বিয়ে
গায়ে হলুদ শেফালিকা।।
নদীর তীরে বেনুর সুরে তোমার নামের মায়া ঘনায়,
করুণ আকাশ গ’লে তোমার নাম ঝরে নীহার কণায়
আমন ধানের মঞ্জরীতে
নাম গাঁথা যে ছন্দ গীতে
হৈমন্তী ঝিম নিশীথে
তারায় জ্বলে নামের শিখা।।
ছায়া পথের কুহেলিকায় তোমার নামের রেণু মাখা,
ম্লান মাধুরী ইন্দুলেখায় তোমার নামের তিলক আঁকা।
তোমার নামে হয়ে উদাস
ধুমল হোলো বিমল আকাশ
কাঁদে শীতের হিমেল বাতাস
কোথায় সুদূর নীহারিকা।।
তোমার নামের শত-নোরী বনভূমির গলায় দোলে
জপ শুনেছি তোমার নামের মুহুর্মূহু কুহুর বোলে।
দুলালচাঁপার পাতার কোলে
তোমার নামের মুকুল দোলে
কৃষ্ণচূড়া, হেনা বলে
চির চেনা সে রাধিকা।।
বিশ্ব রমা সৃষ্টি জুড়ে তোমার নামের আরাধনা
জড়িয়ে তোমার নামাবলী – হৃদয় করে যোগসাধনা।
তোমার নামের আবেগ নিয়া
সিন্ধু ওঠে হিল্লোলিয়া
সমীরণে মর্মরিয়া
ফেরে তোমার নাম-গীতিকা।।